Recent Posts

সমবায় সমিতির ধারণা, বৈশিষ্ট্য, নীতিমালা ও গঠন প্রণালী

 


সমবায় সমিতির ধারণা, বৈশিষ্ট্য, নীতিমালা ও গঠন প্রণালী


সমবায় সমিতি (Cooperative Society) একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান যা সমবায়ী নীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এটি সাধারণত সদস্যদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে এবং তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধনে সহায়তা করে। 

সমবায় সমিতির ধারণা:


সমবায় সমিতি এমন একটি সংগঠন যা সাধারণ সদস্যদের (অথবা সদস্যদের) মধ্যে একত্রিত হয়ে কিছু বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিল করতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সদস্যদের স্বার্থের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় এবং সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা, বিশ্বাস, এবং সহায়তার ভিত্তিতে কাজ করে।


সমবায় সমিতির বৈশিষ্ট্য:


1. সদস্যভিত্তিক:

   - সমবায় সমিতি সদস্যদের স্বার্থে কাজ করে এবং সদস্যদের সংখ্যা সাধারণত সীমিত হয়।


2. স্বায়ত্তশাসিত:

   - এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, যার নিজস্ব পরিচালনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে।


3. অর্থনৈতিক সহযোগিতা:

   - সদস্যদের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, তথ্য বিনিময়, এবং অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার উদ্দেশ্যে কাজ করে।


4. লাভ ও ক্ষতির অংশীদারি:

   - সমবায় সমিতিতে লাভ ও ক্ষতির ভাগাভাগি সদস্যদের মধ্যে নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী হয়।


5. ডেমোক্রেটিক নিয়ন্ত্রণ:

   - সদস্যরা সমিতির পরিচালনায় সমান অধিকার রাখেন এবং সাধারণ সভায় ভোট প্রদান করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।


সমবায় সমিতির নীতিমালা:


সমবায় সমিতির নীতিমালা সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়:


1. সদস্যতা:

   - সমিতির সদস্য হতে হলে নির্দিষ্ট শর্ত ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।


2. লাভের বন্টন:

   - সমিতির লাভের বণ্টন সদস্যদের মধ্যে তাদের বিনিয়োগের অনুপাত অনুযায়ী হবে।


3. বিপণন ও পরিষেবা:

   - সমিতি সদস্যদের জন্য বিশেষ পরিষেবা ও বিপণনের সুবিধা প্রদান করবে।


4. সাধারণ সভা:

   - সমিতির সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সাধারণ সভায় নেওয়া হবে, যেখানে সব সদস্য অংশগ্রহণ করবেন।


5. অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা:

   - সমিতির অর্থনৈতিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা রক্ষা করা হবে এবং প্রতিবছর নিরীক্ষা করা হবে।


সমবায় সমিতির গঠন প্রণালী:


১. সদস্যদের সংগঠন:

   - প্রথমে সদস্যদের একটি গ্রুপ সংগঠিত করতে হবে, যারা সমবায় সমিতির উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্যে একমত।


২. সমিতির উদ্দেশ্য নির্ধারণ:

   - সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত, যা সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা করবে।


৩. নীতিমালা প্রণয়ন:

   - সমিতির পরিচালনার জন্য একটি নীতিমালা প্রস্তুত করতে হবে, যা কার্যক্রম, লাভের ভাগাভাগি, এবং সদস্যপদ সংক্রান্ত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করবে।


৪. নিবন্ধন:

   - সমবায় সমিতি নিবন্ধনের জন্য স্থানীয় সমবায় দপ্তরে আবেদন করতে হবে। নিবন্ধনের সময় নীতিমালা, সদস্যদের তালিকা, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।


৫. সাধারণ সভার আয়োজন:

   - নিবন্ধনের পর প্রথম সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়, যেখানে সদস্যদের মধ্যে নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়।


৬. কার্যক্রম শুরু:

   - সমবায় সমিতি কার্যক্রম শুরু করতে পারে এবং সদস্যদের সেবা প্রদান করতে পারে।


উপসংহার:


সমবায় সমিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান যা সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা ও সহায়তার ভিত্তিতে কাজ করে। এর গঠন প্রণালী ও নীতিমালা নিশ্চিত করে যে সদস্যরা একত্রিত হয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষা এবং উন্নয়নে কাজ করতে সক্ষম হয়। সঠিকভাবে গঠিত সমবায় সমিতি স্থানীয় সমাজ ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

Post a Comment

0 Comments