Recent Posts

লাহোর প্রস্তাব


লাহোর প্রস্তাব (Lahore Resolution) ছিল ভারতীয় মুসলমানদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি, যা পরবর্তীতে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি স্থাপন করে। এটি 1940 সালের ২৩ মার্চ, লাহোরে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগের বার্ষিক অধিবেশনে গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক, যা ভারত ভাগের পথে মুসলিম লীগকে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা দেয়।


লাহোর প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ দিকে মুসলিম লীগের নেতৃত্বে থাকা মুসলমানরা মনে করেছিল যে, স্বাধীন ভারতের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় তারা সংখ্যালঘু হওয়ায় যথাযথ প্রতিনিধিত্ব ও সুরক্ষা পাবে না। ব্রিটিশ সরকারও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে মতপার্থক্য ও বিরোধকে ব্যবহার করে নিজেদের শাসন বজায় রাখার চেষ্টা করছিল। এই প্রেক্ষাপটে মুসলিম লীগ একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানায়, যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে।


লাহোর প্রস্তাবের মূল বক্তব্য

লাহোর প্রস্তাবে বলা হয়েছিল:


1. স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের দাবি: যে অঞ্চলগুলোতে মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, যেমন উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব ভারত, সেগুলোকে একত্রিত করে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। এই রাষ্ট্রগুলোর জন্য পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

   

2. প্রশাসনিক স্বাধীনতা: প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতে একটি স্বতন্ত্র প্রশাসন থাকবে, যাতে মুসলিম জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা যায়।


3. সংখ্যালঘু অধিকার: প্রস্তাবে মুসলমানদের পাশাপাশি অন্যান্য সংখ্যালঘুদেরও অধিকার সুরক্ষার কথা বলা হয়েছিল। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে মুসলমানদের অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা দাবি করা হয়।


লাহোর প্রস্তাবের প্রভাব

- পাকিস্তান আন্দোলনের সূচনা: লাহোর প্রস্তাব ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য প্রথম আনুষ্ঠানিক দাবি। এটি পরবর্তীতে মুসলিম লীগের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

  

- হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতি: লাহোর প্রস্তাবের ফলে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন আরো প্রকট হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এবং একটি ঐক্যবদ্ধ ভারতের পক্ষে অবস্থান নেয়।

  

- ভারতের বিভাজনের পথ: লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভারত ভাগের আলোচনা ও প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে।


উপসংহার

লাহোর প্রস্তাব ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এটি মুসলিম লীগের আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবিকে সংহত করে এবং শেষ পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের পথ প্রশস্ত করে। ২৩ মার্চকে পাকিস্তানে 'পাকিস্তান দিবস' (Republic Day) হিসেবে পালন করা হয়, যা লাহোর প্রস্তাবের স্মৃতিরক্ষার্থে উদযাপিত হয়।

Post a Comment

0 Comments