Recent Posts

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ধারণা, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব/অবদান

 


ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (Small and Medium Enterprises - SMEs) একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই খাত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রাখে। নিচে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ধারণা, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:


ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ধারণা:

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বলতে এমন প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়, যেখানে সাধারণত সীমিত মূলধন, শ্রম, ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এবং যে প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত স্থানীয় বাজারে পণ্য ও সেবা প্রদান করে। বিভিন্ন দেশে এর সংজ্ঞা কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত ব্যবসার আকার, কর্মচারীর সংখ্যা এবং বার্ষিক টার্নওভারের ভিত্তিতে SME-কে সংজ্ঞায়িত করা হয়।


বৈশিষ্ট্য:

1. কম পুঁজি বিনিয়োগ: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে মূলধন বিনিয়োগ তুলনামূলক কম হয়, যা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সহজতর হয়।

2. স্বল্পসংখ্যক কর্মী: SMEs-এ কর্মচারীর সংখ্যা সাধারণত ছোট আকারের হয়, যা কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করতে যথেষ্ট।

3. স্থানীয় বাজারে কার্যক্রম: এই শিল্প সাধারণত স্থানীয় বাজারে পণ্য ও সেবা সরবরাহ করে।

4. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ দ্রুত এবং সহজ হয়, যা কোম্পানির পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়।

5. নিম্ন উৎপাদন খরচ: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদন খরচ বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম হয়।

6. উদ্ভাবনী ক্ষমতা: SMEs সাধারণত নতুন পণ্য ও সেবার উদ্ভাবনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, কারণ ছোট ব্যবসায়িক কাঠামো উদ্ভাবনের সুযোগ বাড়ায়।


গুরুত্ব ও অবদান:

1. কর্মসংস্থান সৃষ্টি: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, যা বেকারত্ব হ্রাসে বিশাল ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই, SMEs সহজে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে।

2. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (GDP) উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এটি দেশের শিল্পায়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সহায়ক।

3. উদ্যোক্তা উন্নয়ন: SMEs উদ্যোক্তা উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। নতুন ব্যবসার সূচনা এবং পরিচালনা করার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এবং ভবিষ্যতে বড় ব্যবসায় রূপান্তরের সুযোগ পান।

4. রপ্তানি বৃদ্ধি: অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প তাদের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করে।

5. অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন: SMEs দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিল্পায়ন করতে পারে, যা সমগ্র দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে।

6. আর্থসামাজিক উন্নয়ন: এই শিল্পের প্রসার কৃষি, বস্ত্র, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি খাতে আরও উন্নয়ন ঘটায় এবং সুশৃঙ্খল কর্মক্ষেত্র তৈরি করে।

  

চ্যালেঞ্জসমূহ:

যদিও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অনেক অবদান আছে, তবে এটি অনেক চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হয়, যেমন:

- আর্থিক সহায়তার অভাব

- দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাব

- প্রযুক্তিগত পিছিয়ে পড়া

- বাজারের প্রতিযোগিতা

  

এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে আরও সুষ্ঠু নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে SMEs-এর উন্নয়ন করা সম্ভব।

Post a Comment

0 Comments