বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি স্থাপন করে। এই ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালি জাতি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পথে যাত্রা শুরু করে।
পটভূমি
১. অসহযোগ আন্দোলন: ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে তোলে। পাকিস্তানি সরকার আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে, যার ফলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
২. ২৫ মার্চের গণহত্যা: ২৫ মার্চ রাতের অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা শুরু করে। এ রাতে ঢাকায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় এবং দেশব্যাপী অরাজকতা সৃষ্টি হয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা
১. শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ: ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার পর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ সকালে তার আবাসস্থল থেকে একটি ভাষণ দেন। তিনি বাঙালি জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"
২. স্বাধীনতার ঘোষণা: বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে স্পষ্ট করে দেন যে, পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের শাসনের অধীনে থাকতে পারে না। তিনি স্বাধীনতার জন্য জনগণকে ডাক দেন এবং যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলেন।
ঘোষণার প্রভাব
১. মুক্তিযুদ্ধের সূচনা: বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার ফলে বাঙালি জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সংকল্প আরও দৃঢ় হয়। তারা নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে নামেন।
২. দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ: ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
৩. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ: বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
উপসংহার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়। এই ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালি জাতি নিজেদের স্বাধীনতার পথে যাত্রা শুরু করে এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম চালিয়ে যেতে উৎসাহিত হয়। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি স্থাপন করে, যা পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের দিকে নিয়ে যায়।
0 Comments