Recent Posts

মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায়ের প্রকারভেদ

 


মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায়ের প্রকারভেদ মূলত তিনটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত: একক মালিকানা, অংশীদারি মালিকানা এবং কোম্পানি। প্রতিটি প্রকারের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। নিচে এই প্রকারভেদের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:


১. একক মালিকানা (Sole Proprietorship)


সংজ্ঞা:

একক মালিকানা হল একটি ব্যবসায়িক গঠন যেখানে একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ মালিক এবং পরিচালনা করেন।


বৈশিষ্ট্য:

- মালিক একাই ব্যবসার সকল সিদ্ধান্ত নেন।

- লাভ এবং ক্ষতি পুরোপুরি মালিকের উপর নির্ভর করে।

- সাধারণত প্রতিষ্ঠানের জন্য কম খরচ এবং সহজ প্রক্রিয়া।

- ব্যবসার এবং মালিকের সম্পদ এবং দায়িত্ব একত্রিত।


সুবিধা:

- সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা।

- সহজ ও দ্রুত প্রতিষ্ঠা এবং বন্ধ করার প্রক্রিয়া।

- লাভ পুরোপুরি মালিকের কাছে যায়।


অসুবিধা:

- মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ব্যবসার দেনার জন্য ঝুঁকিতে থাকে।

- সীমিত পুঁজি এবং সম্পদ।

- সাফল্যের জন্য মালিকের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


২. অংশীদারি মালিকানা (Partnership)


সংজ্ঞা:

অংশীদারি মালিকানা হল একটি ব্যবসায়িক গঠন যেখানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং লাভ ও ক্ষতির ভাগাভাগি করেন।


বৈশিষ্ট্য:

- অংশীদাররা সম্মিলিতভাবে ব্যবসার পরিচালনা করেন।

- চুক্তির মাধ্যমে অংশীদারদের মধ্যে দায়িত্ব ও লাভ ভাগাভাগি করা হয়।

- সাধারণভাবে দুটি ধরনের অংশীদার: সাধারণ অংশীদার এবং সীমিত অংশীদার।


সুবিধা:

- পুঁজি সংগ্রহের সুযোগ বাড়ে, কারণ একাধিক অংশীদার থাকে।

- বিভিন্ন দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করার সুযোগ।

- লাভ ও ক্ষতি ভাগাভাগি করার মাধ্যমে ঝুঁকি কমে।


অসুবিধা:

- অংশীদারদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।

- দায়িত্বের জন্য সকল অংশীদার একসাথে দায়ী।

- একাধিক অংশীদারের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ধীর হতে পারে।


৩. কোম্পানি (Corporation)


সংজ্ঞা:

কোম্পানি হল একটি আইনগত সত্তা যা মালিকদের থেকে আলাদা এবং যার নিজস্ব অধিকার এবং দায়িত্ব থাকে।


বৈশিষ্ট্য:

- মালিকানা শেয়ারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।

- কোম্পানির মালিকানা বিভিন্ন শেয়ারহোল্ডারের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

- কোম্পানির সিদ্ধান্ত নিতে পরিচালন কমিটি থাকে।


সুবিধা:

- মালিকদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি কোম্পানির দেনার জন্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে না (লিমিটেড লাইবিলিটি)।

- পুঁজি সংগ্রহের জন্য শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে সুযোগ।

- দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব এবং স্থিতিশীলতা।


অসুবিধা:

- প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার প্রক্রিয়া জটিল ও ব্যয়বহুল।

- কোম্পানির লাভের ওপর কর দিতে হয়।

- শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।


উপসংহার:

মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায়ের প্রকারভেদ উদ্যোক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি দিক। একক মালিকানা, অংশীদারি মালিকানা, এবং কোম্পানি প্রতিটিরই নিজস্ব সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে, যা উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য, বাজেট এবং ব্যবসার প্রকারভেদ অনুযায়ী নির্বাচন করা উচিত।

Post a Comment

0 Comments