Recent Posts

মুক্তিযুদ্ধ ও বিশ্ব জনমত


মুক্তিযুদ্ধ ও বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে সংঘটিত হয় এবং এই সময়কালীন আন্তর্জাতিক মহলের মনোভাব ও প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সহানুভূতি এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। নিচে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ব জনমতের বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হলো:


১. গণহত্যার প্রতিবাদ

- গণহত্যার খবর: ২৫ মার্চের গণহত্যার পর আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে শুরু করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অমানবিক কার্যকলাপের খবর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

- আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ: বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও মানবাধিকার কর্মীরা পাকিস্তানি সরকারকে হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনের জন্য দায়ী করে সমালোচনা করেন।


২. শরণার্থীদের সমস্যা

- শরণার্থীদের সংখ্যা: মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় ১০ মিলিয়ন বাঙালি ভারত সীমান্তে শরণার্থী হয়ে যায়। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

- আন্তর্জাতিক সাহায্য: বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা (যেমন ইউএনএইচসিআর) শরণার্থীদের জন্য খাদ্য, আশ্রয়, ও চিকিৎসা সরবরাহের জন্য সহায়তা পাঠাতে শুরু করে।


৩. রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

- ভারতের ভূমিকা: ভারত মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাদের সশস্ত্র শক্তি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করে। ভারতের সরকার বাংলাদেশে শরণার্থীদের পরিস্থিতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

- আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা: ইউনাইটেড নেশনস (জাতিসংঘ) ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।


৪. গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সহানুভূতি

- বিশ্বজুড়ে সমর্থন: বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিক এবং শিল্পীরা বাংলাদেশ স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে অনেকেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে কথা বলেন।

- জাগরণ: বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সমর্থনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন করে।


৫. যুদ্ধশেষে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

- বাংলাদেশের স্বাধীনতা: ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর, বিভিন্ন দেশ দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করে। ১৯৭২ সালের মধ্যে বেশিরভাগ দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।


উপসংহার

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই এই যুদ্ধের ফলস্বরূপ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ব জনমত একটি প্রমাণ যে, ন্যায় ও মানবাধিকারের জন্য সংগ্রামে বিশ্বের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।

Post a Comment

0 Comments