Recent Posts

আইসিটি শেখার সুযোগ?

 

আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) শেখার সুযোগ বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। ডিজিটাল দক্ষতা আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, এবং শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পেশাজীবীদের জন্যও আইসিটি দক্ষতা অর্জন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিচে আইসিটি শেখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এবং উপায়গুলো তুলে ধরা হলো:



১. প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা

   - স্কুল ও কলেজে আইসিটি শিক্ষা: বাংলাদেশের অনেক স্কুল ও কলেজে এখন আইসিটি বিষয়ে পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত আইসিটি বিষয়ে মৌলিক থেকে উন্নত জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

   - বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটি শিক্ষা: দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স, ইনফরমেশন টেকনোলজি, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইসিটি বিষয়ে বিশেষায়িত কোর্স প্রদান করে।


২. অনলাইন কোর্স

   - ম্যাসিভ ওপেন অনলাইন কোর্স (MOOCs): Coursera, edX, Udemy, Khan Academy ইত্যাদি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে আইসিটি এবং প্রযুক্তির উপর বিভিন্ন কোর্স পাওয়া যায়। অনেক কোর্স বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে করা যায়।

   - স্থানীয় অনলাইন কোর্স: Bangladesh ICT Division, Skill Development Institutes এবং অন্যান্য স্থানীয় প্ল্যাটফর্মগুলো থেকেও অনলাইন আইসিটি কোর্স করার সুযোগ রয়েছে।

   

৩. সরকারি প্রশিক্ষণ উদ্যোগ

   - LICT (Leveraging ICT for Growth): বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশনের আওতায় LICT প্রকল্পের মাধ্যমে যুব সমাজকে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং, এবং ডাটা এনালিটিক্সের মতো বিষয়ে বিভিন্ন কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়।

   - শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব: বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা আইসিটি এবং প্রোগ্রামিং শেখার সুযোগ পায়।

   - ICT বেসিক ট্রেনিং প্রোগ্রাম: দেশের বিভিন্ন স্থানে আইসিটি বিষয়ে বেসিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্যও উন্মুক্ত।


৪. ইনফরমাল ও স্ব-শিক্ষা (Self-learning)

   - ইউটিউব টিউটোরিয়াল: ইউটিউব একটি বিশাল রিসোর্স যেখানে বিভিন্ন আইসিটি বিষয়ে ফ্রি টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইন, এবং অ্যানিমেশন থেকে শুরু করে আরও অনেক বিষয়ে শেখা যায়।

   - গুগল এবং অন্যান্য ওয়েবসাইট: গুগল সার্চ এবং ওয়েবসাইটগুলো থেকে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা, ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট, এবং আইটি সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান শেখা যায়। Stack Overflow, GitHub, এবং অন্যান্য ফোরাম ও প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যাপক সাহায্য পাওয়া যায়।


৫. ফ্রিল্যান্সিং এবং ক্যারিয়ার স্কিল ডেভেলপমেন্ট

   - ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে কাজ শেখা: Upwork, Fiverr, এবং Freelancer-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে ফ্রিল্যান্স কাজ করার মাধ্যমে আইসিটি বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব। এখানে কাজ করার জন্য প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি দক্ষতা প্রয়োজন।

   - আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র: বিভিন্ন বেসরকারি আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেমন BASIS Institute of Technology & Management (BITM), CodersTrust Bangladesh, এবং অন্যান্য ইনস্টিটিউট, ফ্রিল্যান্সিং এবং বিভিন্ন আইসিটি বিষয়ে দক্ষতা বিকাশের জন্য কোর্স প্রদান করে।


৬. আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন কোর্স

   - প্রফেশনাল সার্টিফিকেশন: CompTIA, Cisco, Microsoft, Google, এবং Oracle-এর মতো সংস্থাগুলোর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন কোর্স আইসিটি পেশাদারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সার্টিফিকেশনগুলো পেশাগত উন্নতি এবং উচ্চ বেতনের চাকরির জন্য সহায়ক।

   - মাইক্রোসফট সার্টিফাইড প্রফেশনাল (MCP), Cisco Certified Network Associate (CCNA), CompTIA A+ ইত্যাদি সার্টিফিকেশন কর্মজীবনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে।


৭. আইসিটি ক্লাব ও কমিউনিটি

   - ছাত্র আইসিটি ক্লাব: অনেক স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটি ক্লাব রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আইসিটি নিয়ে কাজ করতে এবং শেখার সুযোগ পায়।

   - অনলাইন কমিউনিটি ও ফোরাম: বাংলাদেশের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ এবং অনলাইন ফোরামে আইসিটি বিষয়ক আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর করা হয়। এই কমিউনিটিগুলোতে যুক্ত হয়ে নেটওয়ার্কিং এবং শেখার সুযোগ বৃদ্ধি পায়।


উপসংহার

আইসিটি শেখার প্রচুর সুযোগ রয়েছে এবং এর প্রয়োজনীয়তাও দিন দিন বাড়ছে। আপনি যদি স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হন, তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইন কোর্স ও স্ব-শিক্ষার মাধ্যমে আইসিটি দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। পেশাজীবীদের জন্য আইটি সার্টিফিকেশন কোর্স এবং ফ্রিল্যান্সিংও একটি ভাল উপায় হতে পারে। বাংলাদেশের আইসিটি খাতে সরকারের উদ্যোগ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের প্রসার এ খাতে দক্ষতা অর্জনের পথকে আরও সুগম করেছে।

Post a Comment

0 Comments