Recent Posts

মুদ্রাস্ফীতি কত প্রকার?

 


মুদ্রাস্ফীতি সাধারণত তার কারণ, তীব্রতা, এবং প্রভাবের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকারে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। মূলত, মুদ্রাস্ফীতিকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:


১. কারণ অনুযায়ী মুদ্রাস্ফীতি

ক. চাহিদা-উদ্দীপিত মুদ্রাস্ফীতি (Demand-Pull Inflation):

এটি তখন ঘটে যখন পণ্য ও সেবার জন্য চাহিদা সরবরাহের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। অর্থাৎ বাজারে চাহিদা বেশি থাকে কিন্তু পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকে না, ফলে দাম বৃদ্ধি পায়। উদাহরণ:

- আয় বৃদ্ধি, বেকারত্ব কমে আসা, অথবা সরকারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ব্যয়।

  

খ. ব্যয়-চাপিত মুদ্রাস্ফীতি (Cost-Push Inflation):

এটি ঘটে যখন উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়, যেমন কাঁচামাল, শ্রম, বা জ্বালানির খরচ বেড়ে যায়। উৎপাদকরা এই অতিরিক্ত খরচকে পণ্যের মূল্যে চাপিয়ে দেয়, ফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।


গ. মুদ্রা সরবরাহ-ভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি (Monetary Inflation):

যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহ করে, অর্থাৎ বেশি টাকার নোট ছাপে বা সুদের হার খুব কমিয়ে দেয়, তখন অর্থনীতিতে প্রচুর অর্থ প্রবাহিত হয়। এর ফলে অতিরিক্ত চাহিদা সৃষ্টি হয় এবং পণ্যের দাম বাড়তে থাকে।


২. তীব্রতা অনুযায়ী মুদ্রাস্ফীতি

ক. হালকা মুদ্রাস্ফীতি (Creeping or Mild Inflation):

এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি কম তীব্র হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে ধীরে ধীরে ঘটে। বছরে ২-৩% হারে দাম বাড়লে তাকে হালকা মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। এটি অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক নয়, বরং স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষণ হতে পারে।


খ. মাঝারি মুদ্রাস্ফীতি (Walking or Moderate Inflation):

এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি বছরে ৩-১০% হার নিয়ে ঘটে। এটি কিছুটা উদ্বেগজনক হতে পারে কারণ দাম দ্রুত বাড়তে থাকে এবং জনগণের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়। মাঝারি মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করে।


গ. তীব্র মুদ্রাস্ফীতি (Galloping Inflation):

যখন মুদ্রাস্ফীতির হার বছরে ১০% বা তার বেশি হয়, তখন তাকে তীব্র মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। এটি অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দেয়, এবং পণ্যের দাম দ্রুত বেড়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে।


ঘ. অতিমাত্রার মুদ্রাস্ফীতি (Hyperinflation):

এটি অত্যন্ত তীব্র মুদ্রাস্ফীতি, যেখানে দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং মূল্যবৃদ্ধির হার শতকরা হাজারে বা তার বেশি হতে পারে। এর ফলে মুদ্রার মান একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯২৩ সালে জার্মানি বা ২০০০-এর দশকে জিম্বাবুয়েতে এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি দেখা গিয়েছিল।


৩. প্রভাব অনুযায়ী মুদ্রাস্ফীতি

ক. খোলামেলা মুদ্রাস্ফীতি (Open Inflation):

যখন বাজারে পণ্যের দাম প্রকাশ্যে বৃদ্ধি পায় এবং মূল্যবৃদ্ধি সবার কাছে দৃশ্যমান হয়, তখন তাকে খোলামেলা মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। এটি পণ্য ও সেবার দামে সরাসরি প্রভাব ফেলে।


খ. চাপা মুদ্রাস্ফীতি (Suppressed Inflation):

এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি সাধারণত সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধিকে চাপা রাখার চেষ্টা করে। এর ফলে বাজারে কালোবাজারি বা পণ্যের সংকট দেখা দেয়।


৪. অন্য কিছু বিশেষ প্রকারের মুদ্রাস্ফীতি

ক. মুল্য প্রত্যাশার মুদ্রাস্ফীতি (Built-in Inflation):

এটি ঘটে যখন শ্রমিকরা ভবিষ্যতে মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যাশা করে মজুরি বৃদ্ধির দাবি করে, এবং উৎপাদন খরচের সাথে মজুরি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পণ্যের দাম বাড়ে এবং আবারও মজুরি বৃদ্ধির চাহিদা তৈরি হয়।


খ. মূল্যবৃদ্ধি-জনিত মুদ্রাস্ফীতি (Sectoral Inflation):

কিছু নির্দিষ্ট খাতের বা শিল্পের পণ্য ও সেবার দাম দ্রুত বৃদ্ধি পেলে তা সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতিতে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, জ্বালানি বা খাদ্য খাতে হঠাৎ দাম বেড়ে গেলে অন্যান্য খাতেও মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।


এই বিভিন্ন প্রকারভেদ মুদ্রাস্ফীতির প্রকৃতি ও তার অর্থনৈতিক প্রভাব বুঝতে সাহায্য করে।

Post a Comment

0 Comments