এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা, যা কম্পিউটারের ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, স্পাইওয়্যার, র্যানসমওয়্যার, এবং অন্যান্য ক্ষতিকর সফটওয়্যার সনাক্ত ও অপসারণে সাহায্য করে। এটি বিভিন্ন পদ্ধতি এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনার ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখে। নিচে এন্টিভাইরাসের কাজের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
১. ভাইরাস সিগনেচার ডিটেকশন
- এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারগুলির মধ্যে একটি বিশাল ভাইরাস সিগনেচার ডাটাবেস থাকে, যা বিভিন্ন ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যারের সুনির্দিষ্ট কোড বা সিগনেচার সংরক্ষণ করে।
- প্রতিবার স্ক্যান করার সময় এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ডাটাবেসে থাকা সিগনেচারের সাথে ফাইলগুলো মিলিয়ে দেখে, যাতে ভাইরাস সনাক্ত করা যায়। যদি কোনো ফাইলের কোড ভাইরাসের সিগনেচারের সাথে মেলে, তবে সেই ফাইলকে ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
২. হিউরিস্টিক অ্যানালাইসিস
- এন্টিভাইরাস শুধু পরিচিত ভাইরাস নয়, নতুন ভাইরাসও শনাক্ত করতে পারে হিউরিস্টিক অ্যানালাইসিস পদ্ধতি ব্যবহার করে।
- এই পদ্ধতিতে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার সন্দেহজনক ফাইল এবং প্রোগ্রামের আচরণ বিশ্লেষণ করে। ফাইলটি যদি অস্বাভাবিক বা বিপজ্জনক আচরণ করে, তবে এটি ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
৩. রিয়েল-টাইম প্রোটেকশন
- এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার রিয়েল-টাইম প্রোটেকশন দেয়, যা কম্পিউটারে চলমান প্রতিটি ফাইল ও প্রোগ্রামকে স্ক্যান করে।
- যখনই একটি নতুন ফাইল তৈরি হয়, ডাউনলোড করা হয়, বা চালু করা হয়, তখন এন্টিভাইরাস তাৎক্ষণিকভাবে সেই ফাইলটি স্ক্যান করে ক্ষতিকর কোড আছে কিনা তা পরীক্ষা করে।
৪. স্যান্ডবক্সিং (Sandboxing)
- অনেক উন্নত এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার স্যান্ডবক্সিং পদ্ধতি ব্যবহার করে। সন্দেহজনক ফাইল বা প্রোগ্রামগুলোকে একটি আলাদা পরিবেশে চালিয়ে দেখা হয়, যা মূল সিস্টেমের বাইরের থাকে।
- এতে ফাইলটি কম্পিউটারে কোনো ক্ষতি করতে পারে না এবং এটি নিরাপদ না বিপজ্জনক তা নির্ধারণ করা সহজ হয়।
৫. বিহেভিয়ারাল মোনিটরিং
- এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি সন্দেহজনক প্রোগ্রামের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে থাকে। যেমন, কোনো ফাইল যদি অপ্রত্যাশিতভাবে ডেটা ডিলিট করা শুরু করে বা অনেক বেশি মেমরি ব্যবহার করে, তবে এটি বিপজ্জনক বলে ধরে নেওয়া হতে পারে।
- ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাসের বিভিন্ন সাধারণ আচরণ সম্পর্কে ধারণা রেখে এই ধরনের সফটওয়্যার ফাইলগুলোর কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করে।
৬. ফিশিং এবং ওয়েব প্রোটেকশন
- এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্রাউজিং নিরাপত্তা দেয় এবং অনিরাপদ ওয়েবসাইট, ফিশিং লিংক, এবং সন্দেহজনক ডাউনলোড থেকে রক্ষা করে।
- যদি কোনো লিংক বা ওয়েবসাইটকে ক্ষতিকর মনে হয়, তবে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করা হয় বা ওয়েবসাইটটি ব্লক করা হয়।
৭. স্ক্যানিং অপশন
- এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার সাধারণত তিন ধরনের স্ক্যানিং সুবিধা দেয়:
- Quick Scan: শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও স্থানগুলো স্ক্যান করে, যা কম সময় লাগে।
- Full Scan: পুরো সিস্টেম স্ক্যান করে, এটি দীর্ঘ সময় নেয় তবে বিস্তারিতভাবে সিস্টেম বিশ্লেষণ করে।
- Custom Scan: নির্দিষ্ট ফোল্ডার বা ফাইল স্ক্যান করতে পারে।
৮. কোয়ারেন্টাইন এবং অপসারণ
- যখন কোনো ভাইরাস বা সন্দেহজনক ফাইল সনাক্ত হয়, তখন সেটিকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়, যা মূল সিস্টেম থেকে আলাদা। এটি কম্পিউটার থেকে সরাসরি মুছে দেওয়ার আগে ব্যবহারকারীর পর্যালোচনার জন্য রাখা হয়।
- ব্যবহারকারী চাইলে সেই ফাইলটি সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে পারে।
উপসংহার
এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার বিভিন্ন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম্পিউটারকে সুরক্ষিত রাখে। এর মূল কাজ হলো ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার সনাক্ত করা, ক্ষতিকর ফাইল আলাদা রাখা, এবং রিয়েল-টাইম প্রোটেকশন দিয়ে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করা। নিয়মিত আপডেট করা এবং এন্টিভাইরাসের সব সুরক্ষা ফিচার চালু রাখলে আপনি আপনার ডিভাইসকে ভাইরাস আক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখতে পারবেন।
0 Comments