Recent Posts

মুদ্রাস্ফীতি বনাম ডিফ্লেশন?

 


মুদ্রাস্ফীতি এবং ডিফ্লেশন অর্থনীতির দুই বিপরীতমুখী অবস্থা, যাদের প্রভাব এবং বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা। দুটিই আর্থিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, তবে তাদের প্রভাব অর্থনীতির বিভিন্ন স্তরে ভিন্নভাবে কাজ করে। নিচে মুদ্রাস্ফীতি ও ডিফ্লেশনের মধ্যে পার্থক্য এবং প্রভাব তুলে ধরা হলো:


মুদ্রাস্ফীতি (Inflation):

মুদ্রাস্ফীতি তখন ঘটে যখন সাধারণভাবে পণ্যের দাম বাড়ে এবং মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। এটি স্বাভাবিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বা সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্যের অভাবে হতে পারে।


মূল কারণ:

- চাহিদা বৃদ্ধি (Demand-pull): যখন বাজারে পণ্যের চাহিদা সরবরাহের তুলনায় বেশি হয়, তখন দাম বাড়তে থাকে।

- সরবরাহ ব্যয় বৃদ্ধি (Cost-push): পণ্য উৎপাদনের ব্যয় বেড়ে গেলে (যেমন শ্রম, কাঁচামাল ইত্যাদি), মূল্যস্ফীতি ঘটে।

- অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহ (Monetary expansion): যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ সরবরাহ বাড়ায়, তখন মুদ্রার মূল্য কমে এবং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।


প্রভাব:

- মুদ্রার মূল্য কমে: একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুদ্রা দিয়ে পূর্বে যতটা পণ্য কেনা যেত, মুদ্রাস্ফীতির ফলে তার চেয়ে কম পণ্য কেনা যায়।

- উৎপাদন এবং বেতন বৃদ্ধি: মুদ্রাস্ফীতি থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি লাভের জন্য উৎপাদন বাড়ায় এবং কর্মীদের মজুরি বাড়াতে পারে।

- সঞ্চয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়: সঞ্চিত অর্থের ক্রয়ক্ষমতা কমে, ফলে মানুষ মুদ্রাস্ফীতির সময় কম সঞ্চয় করে।

- ঋণগ্রহীতাদের জন্য সুবিধা: ঋণগ্রহীতারা মুদ্রাস্ফীতির সময় ঋণ পরিশোধে সুবিধা পান, কারণ ঋণের আসল মূল্য কমে যায়।


সুবিধা:

- উদ্যোগ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি: মুদ্রাস্ফীতির কারণে ব্যবসায়ীরা বেশি উৎপাদনে উৎসাহিত হয়।

- বেকারত্ব কমানো: চাহিদা বাড়লে প্রতিষ্ঠানগুলো আরও শ্রমিক নিয়োগ করে, ফলে কর্মসংস্থান বাড়ে।

- ঋণ পরিশোধ সহজ: ঋণগ্রহীতাদের জন্য ঋণ পরিশোধের বোঝা কমে, কারণ মুদ্রার মূল্য নিম্নমুখী হয়।


অসুবিধা:

- ব্যয়বৃদ্ধি: জনগণের দৈনন্দিন খরচ বৃদ্ধি পায়, যা নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে।

- সঞ্চয় ও বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত: দীর্ঘমেয়াদে মুদ্রাস্ফীতি সঞ্চয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।


---


ডিফ্লেশন (Deflation):

ডিফ্লেশন তখন ঘটে যখন সাধারণভাবে পণ্যের দাম কমে এবং মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি সাধারণত অর্থনৈতিক সংকোচন বা চাহিদার অভাবে হয়।


মূল কারণ:

- চাহিদার হ্রাস (Demand Decline): যখন বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যায়, তখন দাম কমতে শুরু করে।

- অতিরিক্ত সরবরাহ (Excess Supply): পণ্যের সরবরাহ বেশি হলেও চাহিদা কম থাকলে দাম কমে।

- মুদ্রার সংকোচন (Monetary Contraction): মুদ্রাসরবরাহ কমে গেলে অর্থনীতিতে ডিফ্লেশন দেখা দেয়।


প্রভাব:

- মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধি: মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ কম মুদ্রা দিয়ে বেশি পণ্য কেনা সম্ভব হয়।

- বিনিয়োগে বাধা: ভবিষ্যতে দাম আরও কমবে বলে ধারণা করা হলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে অনীহা দেখায়।

- বেকারত্ব বৃদ্ধি: উৎপাদন কমে গেলে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে, ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়।

- ঋণগ্রহীতাদের জন্য চাপ: ঋণের আসল মূল্য অপরিবর্তিত থাকলেও মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় ঋণগ্রহীতাদের জন্য ঋণ পরিশোধের বোঝা বাড়ে।


সুবিধা:

- মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি: কম দামে পণ্য পাওয়া যায়, যা ভোক্তাদের জন্য ইতিবাচক হতে পারে।

- সঞ্চয় বাড়ে: মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় মানুষ বেশি সঞ্চয় করে।


অসুবিধা:

- মন্দা: দীর্ঘমেয়াদী ডিফ্লেশন অর্থনীতিকে মন্দা বা অর্থনৈতিক সংকোচন এর দিকে ঠেলে দেয়।

- কর্মসংস্থান সংকট: বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পায়, এবং আয় হ্রাসের কারণে চাহিদা কমে যায়।

- ঋণের বোঝা বৃদ্ধি: ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধ করতে আরও চাপের মুখে পড়ে, কারণ ঋণের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু আয় কমে।

মূল পার্থক্য: মুদ্রাস্ফীতি বনাম ডিফ্লেশন

উপসংহার:

মুদ্রাস্ফীতি এবং ডিফ্লেশন উভয়ই অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে, তবে তাদের প্রভাব ভিন্ন। মুদ্রাস্ফীতি সাময়িকভাবে অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করতে পারে, তবে এটি যদি খুব বেশি হয়, তাহলে জীবিকা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে, ডিফ্লেশন সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী মন্দা সৃষ্টি করে এবং এটি মোকাবিলা করা কঠিন। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য নীতি নির্ধারকদের মুদ্রাস্ফীতি এবং ডিফ্লেশন উভয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়।

Post a Comment

0 Comments