অর্থনীতির উৎপত্তি ও বিকাশ
গ্রীসে সর্বপ্রথম অর্থনীতির চর্চা শুরু হয়। ইংরেজি “Economics” শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে অর্থনীতি, যা গ্রীক শব্দ “Oikonomia” থেকে এসেছে। ‘Oikonomia’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে গার্হস্থ্য পরিচালনা। গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল অর্থনীতিকে গার্হস্থ্য পরিচালনার বিজ্ঞান (Science of the Household Management) হিসেবে অভিহিত করেন। সুতরাং, আমরা বলতে পারি উৎপত্তিগত দিক থেকে অর্থনীতি হচ্ছে গার্হস্থ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিজ্ঞান − যেখানে পরিবারের বিভিন্ন মৌলিক সমস্যা এবং এসব সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া বিদ্যমান। কিন্তু পরবর্তীতে সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের চিন্তাধারা ও কর্ম পরিধি শুধুমাত্র গৃহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে ব্যাপকতা লাভ করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে অর্থনীতি একটি ¯^তন্ত্র বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়। অর্থনীতিবিদ Adam Smith ১৭৭৬ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations” এ অর্থনীতিকে সম্পদের বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেন। তাঁর এই বই আজকের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। পরবর্তীতে ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে অর্থনীতি আধুনিক যুগে প্রবেশ করে। ১৯৩০ সালে আমেরিকাসহ ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন দেশে মহামন্দা শুরু হয়। এ কারণে এসব দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন অর্থনীতিবিদ J.M. Keynes। তিনি অর্থনীতিতে যেসব সংস্কার করেন তা মহামন্দা কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আধুনিক যুগে James Tobin, Paul. A. Samuelson, Jon Robinson, Milton Friedman, Velfredo Pareto প্রমুখ অর্থনীতিবিদ অর্থনৈতিক চিন্তাধারাকে সমাজকল্যাণের সাথে যুক্ত করেন। তাই বর্তমানে অর্থনীতি কল্যাণের অর্থনীতি হিসেবেও পরিচিত।
অসীম অভাব
মানুষকে আনন্দ বা তৃপ্তি দেয় এমন বস্তুগত অথবা অবস্তুগত দ্রব্য ও সেবা পাওয়ার আকাংখাকে অভাব বলে। জন্মলগ্ন থেকেই মানুষকে সীমাহীন অভাবের সম্মুখীন হতে হয়। একটি অভাব পূরণ হতে না হতেই আরেকটি অভাব দেখা যায়। মানুষের প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবার অভাব পূরণ হলে আরামদায়ক দ্রব্য বা সেবার অভাব অনুভূত হয়। সেটি পূরণ হবার সাথে সাথেই বিলাস জাতীয় দ্রব্য বা সেবার অভাবের মুখোমুখি হতে হয়। এভাবে মানুষের নিরন্তর চাওয়া বা অভাবের শেষ নেই। যেমন- কোন মানুষ যখন ভাড়া বাসায় থাকে পরবর্তীতে আরাম আয়েশ বা স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নিজের বাসায় থাকার আকাংখাকে অনুভব করে। সেটি পূরণ হলে মানুষের মনে উন্নতমানের গাড়ি, মূল্যবান অলংকার ও উন্নত সেবা ইত্যাদির অভাব সৃষ্টি হয়। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে যিনি দুবেলা দুমুঠো খেতে পারছেন পরবর্তীতে তিনি উন্নত খাবার ও বস্ত্র,বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য ভোগদ্রব্য যেমন- টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, টেলিফোন ইত্যাদির অভাব অনুভব করে। এভাবেই অভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। এজন্যই বলা হয় অভাব অসীম।
দুস্প্রাপ্যতা ও নির্বাচন
অভাব পূরণের জন্য প্রাপ্তব্য সম্পদের চেয়ে অভাব বেশি হওয়াটাই হচ্ছে দুস্প্রাপ্যতা। অন্যভাবে বলা যায়, অভাবের চেয়ে সম্পদের স্বল্পতা বা অপর্যাপ্ততাকেই দুস্প্রাপ্যতা বলে। মানুষের জীবনে অভাব সীমাহীন হলেও অভাব পূরণের জন্য সম্পদ সীমিত। এই দুস্প্রাপ্যতা সর্বত্র। সমাজে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাই এ সমস্যার সম্মুখীন হয়। কোন কোন অর্থনীতিতে কোন কোন সম্পদ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, যেমন- যুক্তরাষ্ট্রে ভূমি, মধ্যপ্রাচ্যে তেল, দক্ষিণ আফ্রিকায় সোনার খনি ইত্যাদি। তথাপি এসব দেশেও সকল জনগণের অভাবের পূরণের জন্য সম্পদ সীমিত। কারণ কেউই তার বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে না।
যেহেতু অর্থনীতিতে সম্পদ সীমিত অর্থাৎ মানুষের অভাব পূরণের উপকরণ অসীম নয় সেহেতু মানুষ তার চাওয়ার পুরোটাই পায় না। তখনই মানুষকে নির্বাচন সমস্যায় পড়তে হয়। সাধারণত নির্বাচন বলতে বাছাই করাকে বুঝায়। মানুষের অভাব পূরণে সম্পদের দুস্প্রাপ্যতা থাকায় বিভিন্ন অভাবের মধ্য থেকে অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ অভাবটি বাছাই করে মানুষ তা পূরণের চেষ্টা করে। অর্থনীতিতে ইহাকে নির্বাচন বলে।
সুযোগ ব্যয়
অর্থনীতিবিদরা সম্পদের দুস্প্রাপ্যতা এবং নির্বাচনের মধ্যে সমম্বয় করার জন্য সুযোগ ব্যয় ধারণাটি ব্যবহার করে। সম্পদের দুস্প্রাপ্যতার কারণে মানুষকে অবশ্যই নির্বাচন করতে হয়। যখন আমাদের অসীম অভাবের সবটুকু পূরণ হয় না তখনই বিকল্প কিছু নির্বাচন করতে হয়। অসীম অভাবের ক্ষেত্রে একটি পেতে গেলে আরেকটি ত্যাগ করতে হয়। এই ত্যাগকৃত সুযোগই হচ্ছে সুযোগ ব্যয়।
অর্থনীতিবিদদের এর মতে, কোন জিনিসের সুযোগ ব্যয় সর্বোত্তম বিকল্প দ্রব্যটির উৎপাদন ত্যাগের ব্যয়। সাধারণভাবে বলা যায়, একটি দ্রব্যের অতিরিক্ত একক উৎপাদন পাওয়ার জন্য অপর একটি দ্রব্যের উৎপাদন যা অবশ্যই ত্যাগ করতে হয়।
এই ত্যাগের পরিমাণ হল সুযোগ ব্যয়। উদাহরণ¯^রূপ বলা যায়, একজন শিক্ষার্থীকে তার প্রাত্যহিক পড়াশুনা শেষ করে অবসর সময়ে সাইকেল চালানো এবং গল্পের বই পড়া- এ দুটির মধ্যে যেকোন একটিকে নির্বাচন করতে হয়। সেক্ষেত্রে যদি সে সাইকেল চালানো নির্বাচন করে তখন সাইকেল চালানোর সুযোগ ব্যয় হচ্ছে গল্পের বই পড়া।
অর্থনীতির সংজ্ঞা ও বিষয়বস্তু
অর্থনীতি একটি গতিশীল বিষয়। সমাজ ও সভ্যতার পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। ফলে অর্থনীতির সংজ্ঞা ও বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে পুরাতন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন নতুন চিন্তা-চেতনার সূচনা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অর্থনীতি সম্পর্কে দেয়া কয়েকজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের সংজ্ঞা নিম্নে দেয়া হলোঃ
ক্লাসিকাল অর্থনীতিবিদদের প্রধান এবং অর্থনীতির জনক এডাম স্মিথ এর মতে, ‘অর্থনীতি হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান যা জাতিসমূহের সম্পদের উৎস, ধরণ ও কারণ অনুসন্ধান করে’। নিউ ক্লাসিকাল অর্থনীতিবিদ আলফ্রেড মার্শাল সম্পদের চেয়ে মানবকল্যাণের উপর প্রাধান্য দিয়ে ১৮৯০ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Principles of Economics’ এ বলেন, ‘অর্থনীতি এমন একটি বিষয় যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে।’ অধ্যাপক মার্শালের মতে, মানুষের জন্য সম্পদ প্রয়োজন কিন্তু সম্পদ সংগ্রহই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের কল্যাণ সাধন। অর্থাৎ মানুষ কিভাবে অর্থ উপার্জন করে এবং তা বিভিন্ন অভাব মোচনে ব্যয় করে তাই অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়।
আধুনিক অর্থনীতিবিদদের মতে, মানুষের সকল কার্যাবলির মূল কারণ হচ্ছে অভাবমোচন। কিন্তু অভাবের তুলনায় সম্পদ সীমিত। আধুনিক অর্থনীতিবিদের মধ্যে অধ্যাপক এল. রবিন্স বলেন, ‘অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান যা মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য দুস্প্রাপ্য উপকরণসমূহের মধ্যে সমš^য় সাধনকারী কার্যাবলি আলোচনা করে। মানুষের অভাব অসীম কিন্তু অভাব পূরণকারী সম্পদ খুবই সীমিত। তাই অসীম অভাব ও বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সীমিত সম্পদের মধ্যে কিভাবে সামঞ্জস্য বিধান করা যায় তা অর্থনীতি আলোচনা করে।
অর্থনীতির কোনো সংজ্ঞাই সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। তবে বর্তমানে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদই এল. রবিন্সের সংজ্ঞাকেই অধিক গ্রহণযোগ্য হিসেবে স্বীকার করেন।
অর্থনীতির দশটি নীতি
১। মানুষ আদান-প্রদান করে - সমাজে যেসব দ্রব্য ও সেবা পাওয়া যায় তার পরিমাণ সীমিত কিন্তু এসব দ্রব্যের ও সেবার প্রয়োজন অসীম। সমাজে প্রত্যেকের ভোগ চাহিদা পূরণে সমাজে প্রাপ্ত দ্রব্য বা সেবার পরিমাণ পর্যাপ্ত নয়। একারণে সমাজকে সিদ্ধান্ত নিতে সীমিত সম্পদ কিভাবে ব্যবহার করবে এবং কিভাবে সমাজে বসবাসরত বিভিন্ন মানুষের মধ্যে এই সম্পদ বণ্টন করবে। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, পছন্দের কোনো জিনিস পেতে হলে অপর আরেকটি পছন্দের জিনিস ছেড়ে দিতে
হয়। উদাহরণ স্বরূপ আপনি যদি অবসর সময়ে খেলাধুলা করেন তাহলে বাড়িতে বসে টিভি দেখতে পারবেন না। ঠিক তেমনি কোনো রাষ্ট্র যদি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বেশি করে তাহলে ঐ দেশের জনগনের জীবিকা নির্বাহে ব্যয় কমাতে হবে। এভাবে সমাজে মানুষ আদান-প্রদানের (trade off) মধ্যে বিকল্প অবস্থা বাছাই করে।
২। একটি সুযোগ গ্রহণ করলে অপর একটি সুযোগ মানুষকে ছেড়ে দিতে হয় - সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষকে তার পছন্দের জিনিসের মধ্যে বাছাই করতে হয়। মানুষ যে দ্রব্য বা সেবা ছেড়ে দেয় তা থেকে সুবিধা বঞ্চিত হয়। আবার যে দ্রব্য বা সেবা ভোগ করে তা থেকে সুবিধা প্রাপ্ত হয়। আমাদের দেশে অনেক পথ- শিশু আছে যারা জীবিকা নির্বাহের জন্য রাস্তায় অনেক কিছু ফেরি করে বেড়ায়। কিন্তু তাদেরও স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে তাদের স্কুল ত্যাগ করা হচ্ছে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ ব্যয়।
৩। যুক্তিবাদী মানুষ প্রান্তিক পর্যায়ে চিন্তা করে - মানুষ তার জীবনে চলার পথে অনেক সময় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অল্প কম বা অল্প বেশি পরিবর্তন করে সমন্বয় করে থাকে। এই যে অল্প কম বা অল্প বেশি পরিবর্তন তা হচ্ছে প্রান্তিক পরিবর্তন। প্রান্তিক পরিবর্তন থেকে মানুষ যে সুবিধা পায় সেটি হচ্ছে প্রান্তিক সুবিধা। একজন যুক্তিবাদী মানুষ সবসময় প্রান্তিক খরচের চেয়ে প্রান্তিক সুবিধা বেশি সেই পর্যায়ে চিন্তা করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় একজন যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে আপনি যদি এক ডজন কমলা ১২০ টাকায় কিনে পরবর্তীতে আরও একটি কমলা কিনতে চান তাহলে আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত কমলা কিনবেন যতক্ষণ পর্যন্ত একটি কমলা থেকে প্রাপ্ত প্রান্তিক সুবিধা ঐ কমলার জন্য প্রান্তিক খরচের চেয়ে বেশি হবে।
৪। মানুষ প্রণোদনায় সাড়া দেয় - মানুষের ব্যবহারের পরিবর্তন তখনই ঘটে যখন খরচ বা সুবিধা সংক্রান্ত কোনো পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ মানুষ উদ্দীপনা বা অনুপ্রেরনায় সাড়া দেয়। যেমন-যদি হঠাৎ করে চা এর দাম বেড়ে যায় তাহলে মানুষ চায়ের পরিবর্তে কফি কিনবে অথবা যদি জুতার শো-রুম ‘বাটায়’ জুতার উপর ছাড় দেয়া হয় তাহলে মানুষ অন্য জুতা কম কিনে ‘বাটা’ শো-রুম থেকে জুতা বেশি কিনবে। ঠিক তেমনি শ্রমিকরা যখন বোনাস বেশি পায় তখন তারা কাজে বেশি উৎসাহ পায়। অর্থাৎ যখন কোনো কিছুতে উদ্দীপনা বেশি পায় তখন মানুষ সেদিকে বেশি ঝুঁকে।
৫। বাণিজ্যে সবাই উপকৃত হয় - যদি বাণিজ্য না থাকত তাহলে প্রতিটি পরিবারকে নিজেদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্য উৎপাদন করতে হতো, বস্ত্র তৈরি করতে হতো তেমনি বসবাসের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করতে হতো। কিন্তু এটা কখনই একটি পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য একটি পরিবারকে আরেকটি পরিবারের উপর নির্ভর করতে হয়। অর্থাৎ দুটি পরিবারের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। এতে দুটি পরিবারই উপকৃত হয়। পরিবারের মত বিভিন্ন দেশের মধ্যে তাদের উৎপাদিত বিশেষায়িত দ্রব্য বাণিজ্যে প্রতিটি দেশেই লাভবান হয়।
৬। অর্থনৈতিক কার্যাবলী সংগঠিত করার জন্য বাজার ব্যবস্থা একটি উত্তম উপায় - বাজার অর্থব্যবস্থায় ফার্মসমূহ বা পরিবারবর্গের কোথায় বিনিয়োগ করবে, কি উৎপাদন বা বিক্রয় করবে, কি দামে দ্রব্য বা সেবা বিনিময় করবে− এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে। এখানে দ্রব্য বা সেবার দাম বাজারে চাহিদা ও যোগান এর মাধ্যমে নির্ধারিত হয় এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এতে সমাজে অর্থনৈতিক কল্যাণ সর্বোচ্চ হয়।
৭। সরকার কখনও কখনও বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারে - অর্থনীতিবিদ এডাম স্মীথ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Wealth of Nations’ এ উল্লেখ করেন বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয় ‘অদৃশ্য হাত’ দ্বারা। তবে বাজার ব্যবস্থার অদৃশ্য হাত অনেক সময় মানুষের মৌলিক চাহিদা তথা খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে পারে না। তখন সরকারি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে। সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, দুর্নীতি, আয়কর, কল্যাণ ব্যবস্থা ইত্যাদিতে সরকারি নীতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক কল্যাণের সুষ্ঠ বণ্টণ হয়ে থাকে।
৮। একটি দেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান নির্ভর করে সে দেশের দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের সামর্থ্যরে উপর - প্রতিটি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান নির্ভর করে সে দেশের উৎপাদন ক্ষমতার উপর। যে দেশের দ্রব্য বা সেবা উৎপাদনের ক্ষমতা বেশি সেদেশের মানুষের উন্নত খাবার ব্যবস্থা, উন্নত স্বাস্থ্য সেবা ও নাগরিক সুবিধা বেশি এবং জীবনযাত্রার মানও উন্নত। অন্যদিকে কম উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দেশে মানুষের জীবনযাত্রার মান অনুন্নত। আর এই উৎপাদন ক্ষমতা নির্ভর করে উন্নত যন্ত্রপাতি, উন্নত প্রযুক্তি, শ্রমিকদের দক্ষতা ইত্যাদির উপর।
৯। সরকার যখন অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপায় তখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় - অর্থনীতিতে যখন দামস্তর বৃদ্ধি পায় তখন সেখানে মূল্যস্ফীতি ঘটে। অর্থাৎ অর্থনীতিতে অর্থের যোগান বেশি হলে মুল্যস্ফীতি হয়ে থাকে। আর এই অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ করে যেকোনো দেশের সরকার। একটি দেশের সরকার যখন অধিকমাত্রায় মুদ্রা ছাপায় তখন ঐ দেশে মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। ফলে সে দেশের অর্থের মূল্য বা মান কমে যায়। যেমনঃ মূলস্ফীতির আগে কোনো দেশে ৩০০ টাকায় যদি একটি দ্রব্য পাওয়া যায় পরবর্তীতে মূল্যস্ফীতির পরে ঐ দ্রব্যটির জন্য ৩০০ টাকার বেশি খরচ করতে হয়।
১০। সমাজে স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্বের মধ্যে বিনিময় (trade-off) সম্পর্ক বিদ্যমান - মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সমাজে অনেক সময় স্বল্পকালীন বেকারত্ব দেখা যায়। স্বল্প মেয়াদে যখন দামস্তর বৃদ্ধি পায় তখন ফার্মসমূহ তাদের উৎপাদিত দ্রব্য বা সেবার যোগান বাড়াতে চায়। এ কারণে ফার্মসমূহে অতিরিক্ত দ্রব্য বা সেবা উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হয় যা বেকারত্ব হ্রাস করে। অর্থাৎ মুল্যস্ফীতি বেশি হলে বেকারত্ব কমে এবং বিপরীত অবস্থায় উল্টোটি ঘটে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্বের মধ্যে এই সম্পর্ক বা বিনিময় স্বল্প সময়ের ব্যাপার।
0 Comments